বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানিয়ে ভারতের প্রতি বার্তা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কূটনীতিক জন এফ ড্যানিলোভিচ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিষয়ে কখনই আগ্রাসী মনোভাব রাখা উচিত নয়। ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের সময় মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে ভুল ছিল বলেও স্বীকার করেন তিনি।
শনিবার (৮ মার্চ) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ আয়োজিত এক বিশেষ সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। সংলাপের মূল প্রতিপাদ্য ছিল “গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক”। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম।
ড্যানিলোভিচ বলেন, “ওয়ান-ইলেভেনের সময় মার্কিন সরকার বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি। তবে বর্তমান সরকার জনগণের সমর্থন নিয়ে সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত তাদের অর্থায়ন নীতি ও চলমান সংস্কারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এগিয়ে যাওয়া।”
তিনি আরও বলেন, গত ১৭ বছরে বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধার করে তা সুশাসন সংস্কারে ব্যবহার করা প্রয়োজন। নাগরিক সমাজকে আরও সক্রিয় হতে হবে, যাতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও মজবুত হয়।
ড্যানিলোভিচ বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো শাসক দলের জবাবদিহিতার অভাব। গণতন্ত্র বিকশিত করতে শক্তিশালী সামরিক-বেসামরিক সম্পর্ক অপরিহার্য। স্বৈরাচার কখনোই গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক হতে পারে না। মিডিয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য, নাগরিক সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করতে হবে।”
যুক্তরাষ্ট্র সবসময় নিজস্ব স্বার্থকে প্রাধান্য দেয় — এমন প্রশ্নের জবাবে ড্যানিলোভিচ বলেন, “বাংলাদেশের উচিত বাংলাদেশ ফার্স্ট নীতি গ্রহণ করা। নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ। তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে জেন-জি’দের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে দেশ আরও এগিয়ে যেতে পারে।”
রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম বলেন, “আমরা একটি ছোট সংগঠন গড়ে তুলেছি, যা আমেরিকান জনগণকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন করছে। গত পাঁচ বছরে অর্থায়নের ব্যবস্থা করে আমরা এই উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছি।”
তিনি আরও জানান, দীর্ঘ এক দশক পর বাংলাদেশে এসে তিনি আনন্দিত। এর আগে ভিসা জটিলতার কারণে তিনি বাংলাদেশ সফর করতে পারেননি।
অনুষ্ঠানের শেষ ভাগে শিক্ষার্থী, রাজনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ড্যানিলোভিচ ও মাইলাম। তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দেন।
ড্যানিলোভিচ বলেন, “বাংলাদেশের গণতন্ত্র এগিয়ে নিতে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও নাগরিকদের অংশগ্রহণই হবে ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি।”